শরীরের বিভিন্ন রোগের অতি উপকারী আমরুলশাক
২৮ নভেম্বর ২০২০ | ২৩:৪৮ | নিজস্ব প্রতিবেদকসৌরেন্দু শেখর বিশ্বাস: যে সময়ে যার যা প্রয়োজন, প্রকৃতি অকৃপণভাবেই আমাদের জন্য তা যুগিয়ে দেয়। তেমনই প্রকৃতির অযত্নসম্ভূত একটি দান আমরুলশাক। অম্বষ্ঠা, আম্বেটি, চুক্রিকা, চাঙ্গেরি, চেঙ্গি, টেঙ্গা, পালিয়া কেরী, পুলিচিন্তা, তান্দিটাটং আরক – অঞ্চল ও ভাষাভেদে সবকটি আমরুলেরই নাম। বৈজ্ঞানিক নাম Oxalis corniculata Lin.
ভিজে স্যাঁতসেতে মাটিতে সরু কান্ডবিশিষ্ট বিছিয়ে থাকা গাছ। লম্বা সরু ডাঁটির ওপর তিনটি গুচ্ছ পাতা থাকে। ডাঁটির গোড়ায় হলুদ রঙের ফুল ধরে। ফল বা ক্যাপসুল ক্ষুদ্র ঠ্যাড়সাকৃতির, ভিতরে সারিবদ্ধভাবে অসংখ্য বীজ থাকে। পেকে গেলে হাওয়ার দোলায় বা নাড়াচাড়া খেলে ক্যাপসুল সশব্দে ফেটে গিয়ে বীজ চরদিকে ছড়িয়ে যায়।
আমরুল, শাকের মতো রান্না করে খাওয়া ছাড়াও ঔষধরূপে বিভিন্ন অসুখে খুবই উপযোগী। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া যায়। শীতে সমগ্ৰ গাছ ছায়ায় রেখে শুকনো করে সংরক্ষণ করা উচিৎ।
ব্যবহারবিধিঃ
আ্যন্টিঅক্সিড্যান্টসমৃদ্ধ আমরুলশাক প্রচুর খনিজলবনসহ ভিটামিন সি এরও খনি। গোলমরিচ গুঁড়োসহ রান্না করে দুপুরের ভাতে নিয়মিত খেলে স্কার্ভিরোগ ও মুখের ঘা এবং ঘনঘন সর্দিলাগা ভাল হয়ে যায়। দু-এক দিন ছাড়া ছাড়া বিরাম দিয়ে যে জ্বর আসে তার পক্ষেও এটি ভাল।
অর্শরোগে আধচামচ তিল তেল ও সমপরিমাণ গাওয়া ঘিয়ের এর মিশ্রণে একমুঠো (২৫-৩০ গ্ৰাম) আমরুল শাক, কড়ায় চাপা দিয়ে ভেজে দুপুরে প্রথম-ভাতে মেখে খেতে হবে ১২ – ১৫ দিন, নিয়মিতভাবে।
ফোঁড়ায় গরম জল দিয়ে পাতা মিহি করে বেটে লাগালে দ্রুত ব্যথা যন্ত্রনা কমে যাবে এবং ফোঁড়াও ফেটে যাবে। বিছে বোলতার দংশনে বা আঘাত লেগে ব্যথা বেদনা হলেও এই প্রলেপ লাগালে আরাম পাওয়া যাবে।
গলা ধরা, গলক্ষত, ফ্যারেঞ্জাইটিস, টনসিলাইটিস, দাঁতের মাড়িফোলা ও ব্যথায় এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সামান্য নুনসহ পাতা ফোটানো জল ভালো করে ছেঁকে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় নিয়মিতভাবে দু-বেলা আহারের পর কুল্লি ও গড়গড়া করলে কয়েক দিনের মধ্যেই দারুন উপকার পাওয়া যায়।
আমাশায় মাখন তোলা দুধ বা ঘোলের সঙ্গে পাতার রস ২-৩ চামচ মিশিয়ে সকাল-বিকাল দিন সাতেক খেলেই উপকার হবে।
অবাঞ্ছিত তিল ও আঁচিল নষ্ট করবার জন্য আমরুল পাতার রস সরাসরি দীর্ঘদিন লাগিয়ে দেখুন, উপকার পাবেন।
অত্যন্ত কষ্টদায়ক মাথাধরায় আমরুলপাতার রসের সঙ্গে ৫-৬ ফোঁটা রসুনের রস মিশিয়ে কপালে মাখুন। কিছুটা জল খেয়ে খোলা হাওয়ায় পায়চারি করুন, কয়েক মিনিটের মধ্যে মাথাধরা কমে যাবে।
এছাড়াও স্থানভেদে আমরুলশাকের আরও অনেক লৌকিক ব্যবহার থাকতে পারে।আপনাদের জানা থাকলে অবশ্যই জানান। প্রতিবেদন সমৃদ্ধ হবে।
সৌরেন্দুশেখর বিশ্বাস